জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব নিয়ে সংঘাত, জি এম কাদেরকে সরাতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের নতুন উদ্যোগ
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের আবারও দলীয় অভ্যন্তরীণ চাপে পড়েছেন। দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাংশ তাঁর নেতৃত্ব থেকে সরাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দলের আসন্ন দশম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে এই দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, দলীয় গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ২০ (ক) উপধারার বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনতে চায় একদল জ্যেষ্ঠ নেতা। এদের নেতৃত্বে রয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তাঁরা ২৮ জুন রাজধানীর কাকরাইলের পার্টি অফিস প্রাঙ্গণে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাঁদের দাবি, বর্তমান চেয়ারম্যানের ‘স্বৈরাচারী’ ধারা দলকে অগণতান্ত্রিক করে তুলেছে। সেই ধারাটি অনুযায়ী, চেয়ারম্যান যেকোনো পদে নিয়োগ, অপসারণ বা পরিবর্তন করতে পারেন—যা তাঁরা বাতিল করতে চান।
জি এম কাদেরের পক্ষ থেকে ১৬ জুন এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সম্মেলনের জন্য নির্ধারিত চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র হল বাতিল করায় তা স্থগিত করা হয়েছে। তবে বিরোধী পক্ষ বলছে, এই সিদ্ধান্ত একক ও অগণতান্ত্রিকভাবে নেওয়া হয়েছে, যা পার্টির প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।
তাঁদের দাবি, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল না পেলে দলীয় কার্যালয়েই সম্মেলন হতো। তাই স্থগিতাদেশ মানা হবে না এবং ২৮ জুনই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এই বিরোধে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতাও যুক্ত হয়েছেন। যাঁরা অতীতে বহিষ্কৃত বা পদচ্যুত হয়েছিলেন—যেমন: কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, আবদুস সাত্তার ও কাজী মামুনুর রশীদ। তাঁরা সম্মেলনের পক্ষে একজোট হয়েছেন।
দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুও জানিয়েছেন, তিনি ২০ (ক) ধারা সংশোধনের পক্ষে। তাঁর ভাষায়, “এই ধারা স্বৈরাচারী। আমি চেয়ারম্যানকে সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছি, কিন্তু তিনি রাজি হননি। ফলে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না।”
এদিকে জি এম কাদের দাবি করেছেন, এরা সবাই ‘ফাও কিছু পাওয়ার’ আশায় দলকে ব্যবহার করছে। তাঁর ভাষায়, “এই গ্রুপটা যদি দল থেকে চলে যায়, তাহলে দলটা এক লাইনে আসবে।”
উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই জি এম কাদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে চাপে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, এনবিআরের হিসাব জব্দ এবং দুদকের অনুসন্ধানের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। এখন আবার দলের ভেতরেই বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
সংক্ষেপে মূল পয়েন্টগুলো:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
বিতর্কিত ধারা | গঠনতন্ত্রের ২০(ক) উপধারা নিয়ে বিরোধ |
সম্মেলনের তারিখ | ২৮ জুন, কাকরাইল পার্টি অফিস |
প্রস্তাবিত নেতৃত্ব | আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চেয়ারম্যান), রুহুল আমিন হাওলাদার (মহাসচিব) |
বর্তমান চেয়ারম্যান | জি এম কাদের |
দ্বন্দ্বের কারণ | একক সিদ্ধান্ত, গঠনতন্ত্রের ক্ষমতা-কেন্দ্রিক ধারা |
বহিষ্কৃতদের ভূমিকা | সম্মেলনের পক্ষে সক্রিয় |
চূড়ান্ত লক্ষ্য | জাতীয় নির্বাচনের আগে নেতৃত্ব বদল |