লেনদেন কর বাড়ল: ক্ষতির মুখে ছোট ও মাঝারি ব্যবসা, বাড়ছে চাপ ও উদ্বেগ
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লেনদেন বা টার্নওভার কর বাড়িয়ে ০.৬ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ করা হবে। অর্থাৎ লাভ হোক বা লোকসান, ব্যবসা করলেই সরকারকে ১ শতাংশ কর দিতে হবে।
এই সিদ্ধান্তে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন। তাঁদের মতে, এই কর বৃদ্ধি তাদের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে যারা সীমিত লাভে ব্যবসা চালান, তাদের কার্যক্রমে এটি সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
🔍 লেনদেন কর কী?
লেনদেন কর হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কত টাকার পণ্য বা সেবা বিক্রি করেছে তার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত কর। এটি লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে নয়, বরং বিক্রির পরিমাণের ওপর ধার্য হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি প্রতিষ্ঠান যদি বছরে ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে, তাহলে তাকে ১ কোটি টাকা লেনদেন কর দিতে হবে—even যদি ওই প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি টাকা লোকসানে থাকে।
🗣️ ব্যবসায়ীদের মতামত
- মুহম্মদ গাজী তৌহিদুর রহমান (এফএম প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ): “লেনদেন কর বাড়ানো ঠিক হয়নি। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মুনাফা না থাকলেও কর দিতে হবে।”
- আজহারুল হক আজাদ (এফইএবি সভাপতি): “রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ছোট ফ্যাশন হাউসগুলো টিকে থাকাই কঠিন। এখন কর বাড়ানো হলে কর্মী ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকবে না।”
- কাজী সাজেদুর রহমান (কেপিসি এন্টারপ্রাইজ): “যারা কর ফাঁকি দেয়, তাদের ধরতে কর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সে দায় কেন ছোট ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে?”
- রিজওয়ান রাহমান (ঢাকা চেম্বার সাবেক সভাপতি): “এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। কর আদায়ে অটোমেশন ও করজাল বাড়ানো জরুরি। শুধু হার বাড়ালে রাজস্ব টেকসই হবে না।”
🧾 বিভিন্ন খাতের জন্য লেনদেন কর হার
খাত | লেনদেন কর হার (২০২৫-২৬) |
---|---|
সাধারণ ব্যবসা | ১% |
টেলিযোগাযোগ খাত | ১.৫% (আগে ২%) |
তামাক ও কোমল পানীয় খাত | ৩% (অপরিবর্তিত) |
📌 বিশেষ উদ্বেগ
- লোকসান হলেও কর দিতে হবে।
- চলতি মূলধনে চাপ তৈরি হবে।
- অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
✅ বিকল্প কী হতে পারত?
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করজাল বৃদ্ধি, অটোমেশন, ও নিরীক্ষার মাধ্যমে চুরি ধরা গেলেই রাজস্ব বাড়বে। এতে সৎ ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে না।
লেনদেন কর বৃদ্ধি দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের উচিত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা, যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারে এবং অর্থনীতির চাকা সচল থাকে।