ল্যুভর জাদুঘর বন্ধ: পর্যটকদের ভিড়ে ক্লান্ত কর্মীদের বিক্ষোভে অচল বিশ্বের সেরা জাদুঘর
প্যারিস, ফ্রান্স – বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাদুঘর ল্যুভর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় সোমবার। যুদ্ধ, সন্ত্রাস বা প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়—জাদুঘর বন্ধের কারণ ছিল এর ক্লান্ত ও অতিভারাক্রান্ত কর্মীদের প্রতিবাদ।
বিশ্বখ্যাত লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসাসহ অগণিত শিল্পকর্মের ঠিকানা এই জাদুঘর এখন নিজের জনপ্রিয়তার ভারেই নুয়ে পড়ছে। ভেতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা বলছেন, দর্শনার্থীদের সীমাহীন ভিড়, কর্মী সংকট এবং প্রতিকূল কাজের পরিবেশের কারণে তাঁদের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না।
অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যায় দরজা
সোমবার সকাল থেকেই জাদুঘরের প্লাজায় হাজারো পর্যটক লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন টিকিট হাতে। কিন্তু কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেওয়া হয় দরজা। টিকিট থাকা সত্ত্বেও কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের মিলওয়াকি থেকে আসা ৬২ বছর বয়সী পর্যটক কেভিন ওয়ার্ড বলেন, “মোনালিসার চোখে যেন কষ্টের ছায়া দেখছি। মনে হচ্ছে, আজ তাঁরও একটা ছুটি দরকার ছিল।”
শ্রমিকদের অভিযোগ: পরিবেশ এখন ‘অসহনীয়’
জাদুঘরের গাইড, নিরাপত্তাকর্মী, টিকিট বিক্রেতা সবাই একযোগে কাজ বন্ধ রাখেন। শ্রমিক ইউনিয়ন বলছে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের চাপ, বিশ্রামের ঘাটতি, সীমিত টয়লেট, আর কাচের পিরামিডের নিচে গরমের অসহ্য অবস্থা কর্মীদের ক্লান্ত করে তুলছে।
ল্যুভরের ধারণক্ষমতা দিনে ৩০ হাজার হলেও গত বছর এখানে এসেছিলেন প্রায় ৮৭ লাখ দর্শনার্থী, যা জাদুঘরের কাঠামোর তুলনায় দ্বিগুণ।
পুরো সংস্কার পরিকল্পনা, কিন্তু সময় লাগবে বহু বছর
জাদুঘর সংস্কারের জন্য ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ইউরো বাজেট ধরা হয়েছে। এই অর্থ আসবে টিকিট বিক্রি, অনুদান ও আবুধাবি শাখা থেকে পাওয়া লাইসেন্স ফি থেকে।
এছাড়া, চলতি বছরের শেষ দিকে ইউরোপের বাইরের পর্যটকদের জন্য টিকিটের দাম বাড়ানোর চিন্তাও করছে কর্তৃপক্ষ।
তবে কর্মীরা বলছেন, “দশ বছর পরের পরিকল্পনার আগে আমাদের এখনকার সমস্যার সমাধান দরকার।”
অন্ধকার ভবিষ্যৎ নাকি পরিবর্তনের সূচনা?
নটর ডেম ক্যাথেড্রালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো সরকারিভাবে সংস্কার পেলেও ল্যুভর এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যেই রয়েছে। পুরো সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এখনো নিশ্চিত নয়।
২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নির্বাচনে জয়ের পর ল্যুভর থেকে ভাষণ দিয়েছিলেন। এমনকি ২০২৪ অলিম্পিকের সময়ও এই জাদুঘরকে প্যারিসের গর্ব হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই দশকের শেষের আগেই ল্যুভরকে একটি নিরাপদ ও আধুনিক জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে।
কিন্তু বাস্তবে, কর্মীদের সমস্যা ও প্রতিদিনের চাপ যদি এখনই না কমানো যায়, তাহলে ইতিহাসের গৌরবময় এই জাদুঘর ধীরে ধীরে পর্যটনের ভারে দমে যেতে পারে।