দুর্যোগ প্রস্তুতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে: এনইএপি কার্যক্রম নিয়ে জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত
দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম সতর্কতা ও প্রতিক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর ব্যবহার সময়ের দাবি হয়ে উঠছে। এজন্য প্রয়োজন আন্তঃসংস্থাগত সমন্বয় ও দক্ষতা বাড়ানো। এমন মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)-এর পরিচালক আহমদুল হক।
বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় কর্মশালা— “বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের জন্য এনইএপি কার্যকর উদ্যোগ: পূর্বাভাস ও মানবিক পদক্ষেপের মধ্যে সেতুবন্ধন”। কর্মশালাটি আয়োজন করে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এবং অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাংগার (এসিএএফ) নেতৃত্বাধীন স্টেপ কনসোর্টিয়াম। অংশ নেয় করডেইড, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও ইউনাইটেড পারপাস-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও।
মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
এই কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল—বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাসের ভিত্তিতে দুর্যোগে আগাম প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করা, যাতে মানুষের জান-মাল রক্ষা করা যায়। কর্মশালাটি জাতীয় পর্যায়ে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, বেসরকারি সংস্থা ও মানবিক সাহায্যদাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বক্তারা কী বললেন?
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের মানবিক কার্যক্রম পরিচালক মো. মোস্তাক হোসেন বলেন, “এনইএপি (National Early Action Protocol) দ্রুত বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি প্রাণিসম্পদ রক্ষা ও দুর্যোগের সময় ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শাহ কামাল খান জানান, আগে এনইএপি সম্পর্কে খুব কম জানতেন অনেকে। তবে স্টেপ কনসোর্টিয়ামের হস্তক্ষেপে এখন এই বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আমিনুল আহসান প্রস্তাব করেন, এনইএপি যেন প্রতি তিন বছর পরপর হালনাগাদ করা হয়, যাতে এর প্রাসঙ্গিকতা বজায় থাকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “স্থানীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা এনইএপি কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত করা খুবই দরকার। এছাড়া সাইলেজ পদ্ধতি প্রাণিসম্পদ রক্ষায় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, তথ্যের অভাব অগ্রসক্রিয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য সমন্বিত তথ্যভিত্তিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, “ইমপ্যাক্ট-ভিত্তিক পূর্বাভাস কার্যকর হতে পারে, তবে তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা আছে। এজন্য একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করা দরকার।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে সরকার জানান, দুটি বিশেষায়িত ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও জেলা পর্যায়ে কনটিনজেন্সি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে, যা স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে।
ভবিষ্যতের পথ কী?
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ড. শাহ কামাল খান বলেন, এই কর্মশালা বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রস্তুতি কাঠামো শক্তিশালী করতে বড় অবদান রাখবে। তিনি সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
ইউনাইটেড পারপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীরামাপ্পা গঞ্চিকারা বলেন, “এনইএপি-কে জাতীয় কাঠামোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে, যেন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সময়মতো জীবন রক্ষাকারী তথ্য পায়।”
🔍 সারাংশে বিশেষ দিকগুলো:
- দুর্যোগ প্রস্তুতিতে এআই ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব
- এনইএপি নিয়ে আন্তঃসংস্থাগত সমন্বয়
- স্থানীয় জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের সমন্বয়
- তথ্যভিত্তিক একক প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রস্তাব
- এনইএপি নিয়মিত হালনাগাদ করার পরামর্শ