হলুদের সাপ্লিমেন্ট কি নিরাপদ? জানুন উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সতর্ক না হলে বিপদ! হলুদের সাপ্লিমেন্ট কি সত্যিই নিরাপদ?

প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে আছে সুস্থতার নানা উপাদান। রোজকার খাবারে এমন অনেক উপাদান থাকে, যেগুলো শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। ঠিক তেমনই একটি ভেষজ উপাদান হলো হলুদ। এতে থাকা কারকিউমিন নামের উপাদানটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। তাই অনেকে নিয়মিত হলুদের সাপ্লিমেন্ট খাচ্ছেন স্বাস্থ্য ভালো রাখার আশায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই সাপ্লিমেন্ট কি সত্যিই নিরাপদ?

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান জানালেন, হলুদের উপকার যেমন আছে, তেমনি অসতর্ক হলে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি।

হলুদ কতটা খাওয়া নিরাপদ?

একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দৈনিক প্রতি কেজি ওজন অনুযায়ী ৩ মিলিগ্রাম হলুদ গ্রহণ করতে পারেন। যেমন, ৫০ কেজি ওজন হলে, দিনে সর্বোচ্চ ১৫০ মিলিগ্রাম হলুদ নিরাপদ। রান্নায় যতটুকু হলুদ ব্যবহার হয়, তা সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবে সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্রহণ করলেই বিপদ।

⚠️ হলুদের সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

১. হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • বমি বা বমিভাব
  • ক্ষুধামান্দ্য (ক্ষুধা কমে যাওয়া)
  • পেটের গ্যাস বা অস্বস্তি
  • পাতলা পায়খানা
  • মাথাব্যথা

এসব উপসর্গ দেখা দিলে সাপ্লিমেন্ট বন্ধ করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।

গুরুতর বিপদের আশঙ্কা

🧠 লিভার ও কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি

অতিরিক্ত হলুদ লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যেতে পারে। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা হতে পারে।
কিডনির দিক থেকেও সমস্যা তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

💉 রক্তে সুগার কমে যাওয়া

যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের জন্য অল্প হলুদও বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ, হলুদ রক্তে সুগার কমিয়ে দিতে পারে। ফলে দেখা দিতে পারে—

  • বুক ধড়ফড়
  • অতিরিক্ত ঘাম
  • শরীর কাঁপা
  • জ্ঞান হারিয়ে ফেলা

🩸 আয়রনের ঘাটতি বেড়ে যেতে পারে

হলুদের সাপ্লিমেন্ট আয়রনের ঘাটতি বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) বাড়াতে পারে।

⚕️ কারা অবশ্যই সাবধান থাকবেন?

  • যাঁরা রক্ত তরল করার ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন) খান
  • পিত্তথলির সমস্যা আছে
  • অন্তঃসত্ত্বা বা স্তন্যদানকারী নারী
  • যাঁরা আগে থেকেই ডায়াবেটিস বা আয়রনের ঘাটতিতে ভুগছেন
  • বয়স্ক ব্যক্তি বা অন্য ওষুধ নিচ্ছেন

এইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই হলুদের সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়।

🟢 রান্নার হলুদেই মিলবে উপকার

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন রান্নায় ব্যবহৃত পরিমাণ হলুদই শরীরের জন্য যথেষ্ট। একটু বাড়তি উপকার পেতে চাইলে মাঝে মাঝে কাঁচা হলুদের পানীয় বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে সাপ্লিমেন্ট খেতে হলে তা যেন হয় স্বল্প সময়ের জন্য, চিকিৎসকের পরামর্শে।

🔚 শেষ কথা

হলুদ উপকারী হলেও সবার জন্য সব সময় নিরাপদ নয়। বিশেষ করে সাপ্লিমেন্ট আকারে গ্রহণের আগে সতর্ক না হলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ। তাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিছু করতে গিয়ে যেন উল্টো ক্ষতি না হয়, সেই বিষয়ে সচেতন থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

Leave a Comment