এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থী | মানিকগঞ্জে বাল্যবিবাহের হার ৬৫%

এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত: মানিকগঞ্জে ৬৫% শিক্ষার্থী বাদ পড়েছে বিয়ের কারণে
প্রতিবেদন বলছে, বাল্যবিবাহই প্রধান কারণ

এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয় থেকে ফরম পূরণ করেছিল ৫২ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নেয় মাত্র ৪৮ জন। বিদ্যালয়টির এক শিক্ষক জানান, যেসব শিক্ষার্থী আসেনি, তাদের কেউ কেউ পরীক্ষার আগে বিয়ে করে ফেলেছে। প্রবেশপত্র নিতে না আসায় খোঁজ নিয়ে বিষয়টি জানা যায়।

শুধু এই বিদ্যালয় নয়, পুরো মানিকগঞ্জ জেলাতেই এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মানিকগঞ্জে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি বিয়ের কারণে। এ হার দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এরপর রয়েছে মাদারীপুর (৫৪ শতাংশ), গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ আরও কয়েকটি জেলা।

পরিসংখ্যান যা বলছে
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষায় এবার ৬ হাজার ৩৮৯ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৩৫০ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৪১ শতাংশ (৫৪৯ জন) শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণ বিয়ে। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশই ছাত্রী। এছাড়া, ২২ জন ছাত্রী গর্ভধারণের কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আবার প্রায় ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিবারে অভাবের কারণে কাজের সন্ধানে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

জেলার ভিত্তিতে বিয়ের কারণে অনুপস্থিত শিক্ষার্থী সংখ্যা:

জেলাতথ্যপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীবিয়ের কারণে অনুপস্থিত
মানিকগঞ্জ৬৯৪৫
মাদারীপুর৯২৫০
ঢাকা৩৪১৯০
গাজীপুর১০৮৫৩
নরসিংদী১১০৫২
নারায়ণগঞ্জ১০৯৪৭
ফরিদপুর১০১৩৭
শরীয়তপুর৮২৩৬
গোপালগঞ্জ৮৪৩৫
কিশোরগঞ্জ৮১৩৫
টাঙ্গাইল৭৯৩০
রাজবাড়ী৪৫২০
মুন্সিগঞ্জ৪৯১৯

অভিভাবকের ভাষ্য
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘মেয়ের বয়স ১৯ হয়ে গেছে, তাই পরিস্থিতি বুঝে বিয়ে দিতে হয়েছে। এখন সে পড়াশোনা করবে কি না, তা নির্ভর করছে তার স্বামীর সিদ্ধান্তের ওপর।’

উপসংহার ও সুপারিশ
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বলেছে, পরীক্ষায় অনুপস্থিতির মধ্যে এমন কিছু কারণ উঠে এসেছে, যেগুলো জাতীয়ভাবে উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে বাল্যবিবাহ ও গর্ভধারণ, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন থামিয়ে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ পরিবারের অভাবে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে।

বোর্ড বলছে, এই ধরনের তথ্য নিয়মিতভাবে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা গেলে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আসল কারণগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

Leave a Comment