তাবুক যুদ্ধ: সাহাবিদের আত্মত্যাগ ও ইসলামের গৌরবময় বিজয়

তাবুক যুদ্ধ: সাহাবিদের আত্মত্যাগে লেখা এক গৌরবময় অধ্যায়

৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ (নবম হিজরি)। আরবের তপ্ত মরুভূমি তখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রোমান সাম্রাজ্যের বিশাল বাহিনী মুসলিমদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক সেই সময় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৩০ হাজার সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে প্রায় ৬৯০ কিলোমিটার দূরে তাবুকের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

তাবুক ছিল সিরিয়ার রোমান সীমান্তঘেঁষা এক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস সিরিয়া ও আরব সীমান্তে ৪০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেন মুসলিম শক্তিকে দমন করতে। মদিনায় তখন ছিল খেজুর পাকার মৌসুম, গরমও ছিল তীব্র। রসদ কম, পথ দুর্গম, কিন্তু রাসুলপ্রেমে সাহাবিদের মনোবল অটুট।

অর্থনৈতিক সংকটেও সাহাবিদের দান ও ত্যাগ

এই কঠিন সময়ে সাহাবিরা নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে নবীজির পাশে দাঁড়ান। কেউ দিলেন উট, কেউ দিলেন স্বর্ণ, রৌপ্য বা খেজুর।
বিশিষ্ট সাহাবি উসমান ইবনে আফফান (রা.) একাই দান করেন:

  • ২০০টি সুসজ্জিত উট (ব্যবসার জন্য প্রস্তুত)
  • ১০০টি খাদ্যসহ উট
  • ১০০ দিনার স্বর্ণ
  • ৯০০ উট ও ১০০টি ঘোড়া

আবু বকর (রা.) ঘরের সব সম্পদ নিয়ে এলেন—৪০০ দিরহাম।
ওমর (রা.) দিলেন অর্ধেক সম্পদ।
আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) দিলেন ২০০ উকিয়া রৌপ্য।
নারীরাও পিছিয়ে ছিলেন না—হার, কানের দুল, পায়েল, এমনকি ছোট খাবারের মুষ্টিও তুলে দেন নবীজির হাতে।

যুদ্ধ ছাড়াই বিজয়, আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় পুরস্কার

রাসুলুল্লাহ (সা.) ৩০ হাজার সাহাবিকে নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে তাবুক অভিমুখে রওনা হন। যুদ্ধের আগেই খবর পেয়ে রোমান বাহিনী পিছু হটে যায়। কোনো রক্তপাত ছাড়াই মুসলমানদের বড় জয় হয়। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, ঈমান, ত্যাগ ও একতা থাকলে কোনো বিশাল শক্তিও প্রতিরোধ করতে পারে না।

পবিত্র কোরআনের বাণী

“হে ইমানদারগণ! তোমাদের কী হয়েছে যে, যখন বলা হলো—আল্লাহর পথে বের হও, তখন তোমরা মাটির দিকে ঝুঁকে পড়লে? তোমরা কি আখিরাতের বদলে দুনিয়ার জীবনকে পছন্দ করো? অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন অতি তুচ্ছ।”
— (সুরা তওবা, আয়াত ৩৮-৩৯)

ইতিহাসে অমর সাহাবিদের আত্মত্যাগ

তাবুক যুদ্ধ ইসলামী ইতিহাসের এমন এক অধ্যায়, যেখানে সাহাবিদের ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও ইসলামের প্রতি নিবেদিত প্রাণ হওয়া প্রতিফলিত হয়েছে। কঠিনতম সময়ে যাঁরা নিজের সবকিছু দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন—তাঁদের নাম ইতিহাসে চিরজীবী হয়ে আছে।

Leave a Comment