নড়িয়ায় কীর্তিনাশা নদীতে ফের ধসে পড়ল নির্মাণাধীন বেইলি সেতু, বাল্কহেডের ধাক্কা ছিল কারণ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি | ২৩ জুন ২০২৫:
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি অস্থায়ী বেইলি সেতু দ্বিতীয়বারের মতো বাল্কহেডের ধাক্কায় ধসে পড়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নড়িয়া বাজারসংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, বালুবোঝাই একটি বাল্কহেড সেতুর পিলারে ধাক্কা দিলে সেতুটির মাঝের অংশ ভেঙে বাল্কহেডের ওপর পড়ে যায়। পরে ভারসাম্য হারিয়ে বাল্কহেডটিও ধীরে ধীরে নদীতে তলিয়ে যায়।
দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এক বছরের ব্যবধানে একই সেতু ধসে পড়ল দ্বিতীয়বার
২০২৪ সালের ২ অক্টোবর একই জায়গায় একবার ধসে পড়েছিল সেতুটি। তখনও বাল্কহেডের ধাক্কাই ছিল মূল কারণ। ঘটনার পর সাময়িকভাবে সেতুটি মেরামত করে পথচারীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
এবারের ধসও ঘটে একই ধরণের দুর্ঘটনায়। এতে প্রশ্ন উঠেছে সেতুর নিরাপত্তা ও নির্মাণ তদারকির মান নিয়ে।
জনদুর্ভোগে নড়িয়ার দুই পাড়ের মানুষ
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুরনো সেতু ভেঙে ফেলার পর নদী পারাপারে বিকল্প কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকায় এলাকাবাসী নির্ভর করছিল এই অস্থায়ী বেইলি সেতুর ওপর। সেতুটি ছিল পথচারীদের চলাচলের একমাত্র সহজ মাধ্যম।
স্থানীয় বাসিন্দা আলম বেপারী জানান,
“নদী পার হতে আমাদের প্রতিদিনই ঝুঁকি নিতে হয়। এখন হাঁটার সেতুটিও দুইবার ভেঙে গেল। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব স্থায়ী সেতুর কাজ শেষ করা হোক।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত পদক্ষেপের আশ্বাস
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রশাসন।
সুরেশ্বর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল জলিল বলেন,
“ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্লা জানান,
“সেতু ধসের খবর পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
দুর্ঘটনার সারসংক্ষেপ:
- অবস্থান: কীর্তিনাশা নদী, নড়িয়া, শরীয়তপুর
- তারিখ: ২৩ জুন ২০২৫
- সেতুর ধরন: নির্মাণাধীন অস্থায়ী বেইলি সেতু
- দুর্ঘটনার কারণ: বাল্কহেডের ধাক্কা
- হতাহত: নেই
- পূর্বের ঘটনা: একই সেতু ধসে পড়ে ২ অক্টোবর ২০২৪
- জনপ্রতিক্রিয়া: ক্ষোভ ও দ্রুত স্থায়ী সেতুর দাবি
- প্রশাসনের অবস্থান: তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস
বিশ্লেষণ:
এক বছরের ব্যবধানে একই সেতুতে একই ধরণের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি শুধুমাত্র অবকাঠামোর দুর্বলতা নয়, এটি নদী পথে চলাচলকারী নৌযানের নিয়ন্ত্রণহীনতার দিকেও ইঙ্গিত করে।
নড়িয়ার দুই পাড়ের হাজারো মানুষ প্রতিদিন এই নদী পারাপারে নির্ভর করে। অস্থায়ী সেতুর ওপর এতবড় ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিকল্প পথ না থাকায় সাধারণ মানুষ দিন দিন নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছে।
নির্মাণাধীন ‘ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলা সেতু’র কাজ দ্রুত শেষ করা ছাড়া এই দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের আর কোনো পথ নেই—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
সূত্র: সত্য বার্তা