শাপলা প্রতীক চেয়ে এনসিপি-নাগরিক ঐক্যের আবেদন ইসিতে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে জাতীয় ফুল শাপলা—এবার প্রতীক হিসেবে চাওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও নাগরিক ঐক্য উভয়েই নির্বাচন কমিশনের কাছে দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা চেয়ে আবেদন করেছে। এনসিপি গত রোববার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে শাপলাকে কেন্দ্র করে। যদিও বিকল্প হিসেবে কলম ও মোবাইল ফোন প্রতীক রাখার কথাও বলা হয়েছে, তবে দলটির স্পষ্ট অবস্থান—তাদের মূল আগ্রহ শাপলা প্রতীকেই।

এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের নদ-নদী, প্রকৃতি ও জলাভূমির সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে শাপলা ফুল। এই প্রতীক গ্রামীণ বাংলার পরিচায়ক, তাই রাজনীতিতেও এর প্রতিফলন থাকা দরকার। এনসিপি মনে করছে, এই প্রতীক জনগণের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে, হয়ে উঠবে গণঅভ্যুত্থান আর সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি।

দক্ষিণাঞ্চলের এনসিপি মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, প্রতীক হওয়া উচিত এমন কিছু, যা সাধারণ মানুষ হৃদয়ে ধারণ করতে পারে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে শাপলা এমন একটি চিহ্ন—যেটা প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ চেনে, ভালোবাসে।

তবে বিষয়টি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কও উঠেছে। অনেকেই বলছেন, শাপলা জাতীয় প্রতীক—এটি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে না। সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক মনে করেন, শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৭২ সালের ‘ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্লেম অর্ডার’-এ পরিষ্কার বলা আছে, পানিতে ভাসমান শাপলা জাতীয় প্রতীকের মূল অংশ। সেই বিবেচনায় শাপলাকে দলীয় প্রতীক হিসেবে দেওয়া উচিত নয়।

সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা জেসমিন টুলী এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, যদি ধানের শীষ বিএনপির প্রতীক হতে পারে, তাহলে জাতীয় ফুল শাপলাকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহারে আপত্তি থাকার কথা নয়। আরেক নির্বাচন বিশ্লেষক আবু আলম শহীদ খান বলেন, যদিও জাতীয় প্রতীকে আরও কিছু উপাদান আছে, তবুও শাপলাই মূল প্রতীক হিসেবে সামনে থাকে।

একই দাবিতে গত ১৭ জুন নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে নাগরিক ঐক্য। তারা তাদের বর্তমান প্রতীক ‘কেটলি’ বাদ দিয়ে শাপলা বা দোয়েল পাখিকে নতুন প্রতীক হিসেবে চেয়েছে। নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়েছেন, প্রথমে তারা দ্বিধায় ছিলেন—জাতীয় প্রতীক ব্যবহার করা যাবে কি না। পরে সম্ভাবনা দেখেই আবেদন করেন।

ইসির খসড়া তালিকায় ১১৫টি নতুন প্রতীকের মধ্যে শাপলা ফুলকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য। তবে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ স্পষ্ট করে বলেন, এখনো শাপলা চূড়ান্তভাবে তফসিলভুক্ত হয়নি। সেটি হলে পরে দেখা হবে কোন দলের দাবি বেশি যৌক্তিক।

মূল প্রশ্ন এখন—শাপলা প্রতীক যদি তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে সেটা কোন দল পাবে? এনসিপি ও নাগরিক ঐক্য দুই দলই দাবি জানালেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। কার দলীয় অবস্থান, প্রচারণা, জনপ্রিয়তা এবং প্রতীকের গুরুত্ব বিবেচনায় কার দাবি অধিক যৌক্তিক—তা নির্ধারণে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।

এই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাপলা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তেই থাকবে, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Comment