বাফুফের আয়োজন: জাতীয় দলে সুযোগ পেতে ঢাকায় ৪৮ প্রবাসী

জাতীয় দলের জার্সির টানে স্টেডিয়ামে প্রবাসীদের ভিড়, ট্রায়ালের আগে জমে উঠেছে আবহ

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুক্রবার বিকেলটা ছিল যেন এক অনানুষ্ঠানিক ‘ওয়ার্ম আপ’—তবে খেলোয়াড়দের জন্য নয়, বরং আবেগ, স্বপ্ন আর সম্ভাবনার। ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেনসহ নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা প্রবাসী তরুণ ফুটবলারদের উপস্থিতিতে গ্যালারি থেকে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছিল এক ধরনের উদ্দীপনা, যা কেবল লাল-সবুজের টানে সম্ভব।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) আয়োজনে আগামীকাল (২৮ জুন) শুরু হচ্ছে তিন দিনের ‘প্রবাসী ফুটবলার ট্রায়াল’। তার আগেই আজ অনুষ্ঠিত হলো ওরিয়েন্টেশন ও রেজিস্ট্রেশন সেশন। মাঠে নামার আগেই অংশগ্রহণকারীরা যেন তৈরি হয়ে নিয়েছেন মানসিকভাবে, আর তাঁদের সঙ্গে এসেছেন বাবা-মা, ভাই-বোনেরা—সবাই একটাই স্বপ্ন নিয়ে, জাতীয় দলে নিজেদের সন্তানদের দেখার আশায়।

ইংল্যান্ডের ক্লাব সাউথএন্ড ম্যানর এফসির সেন্টার ব্যাক তোফায়েল তানিম যেমন জানালেন, হামজা চৌধুরীকে দেখে তাঁর স্বপ্নের শুরু, “হামজাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেখে আমি বাবাকে বলেছিলাম, আমিও খেলতে চাই দেশের হয়ে। আজ আমি সেই পথে চলেছি।”

সুইডেনে অরেঞ্জ এফকেতে খেলা লেফট উইঙ্গার আশিক রহমানের কণ্ঠেও সেই একই আবেগ, “আমি নিজেকে বাংলাদেশি বলেই বিশ্বাস করি। দেশের জার্সি পরে মাঠে নামা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।”

এই ট্রায়ালে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আলোচনায় ছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও। ব্র্যাডফোর্ড থেকে ছেলেকে নিয়ে আসা আশরাফ আবু বললেন, “আমার ছেলে মুসা আল-ঘানি ইউএফসিএ লিডসে খেলছে। হামজাকে দেখেই ওর আগ্রহটা তৈরি হয়। এখন শুধু অপেক্ষা—কবে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামবে।”

প্রথমে ট্রায়ালের জন্য ৫২ জনের তালিকা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ইনজুরি ও ভ্রমণ সমস্যার কারণে খেলোয়াড় সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে। আজকের সেশনে হাজির ছিলেন ৪৩ জন, বাকি পাঁচজনের মধ্যে কেউ এখনো দেশে ফিরছেন, কেউবা ফ্লাইট সমস্যায় আটকে।

এই আয়োজনের সমন্বয়ক ডেনমার্কপ্রবাসী সাকিব মাহমুদ জানালেন, “চোটের কারণে দুজন খেলোয়াড় বাদ পড়েছেন। একজনের ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, আর একজন ট্রায়ালে না আসার কথা আগেই জানিয়েছিলেন।”

তিন দিনের এই ট্রায়াল কেবল মাঠের পারফরম্যান্স দেখার সুযোগ নয়, এটি হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশি তরুণদের জন্য জাতীয় দলের দরজা উন্মুক্ত রাখার এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। বাফুফে চাইছে, প্রবাসীদের এই অংশগ্রহণ ভবিষ্যতেও নিয়মিত হোক।

সবশেষে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে সবার মনে—এই তরুণদের কেউ কি পারবেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের নতুন ‘হিরো’ হয়ে উঠতে? মাঠেই মিলবে উত্তর। তবে আজকের বিকেলটুকু বলে দিচ্ছে—স্বপ্নটা অনেক বড়, এবং সেটা ছুঁতে চাইছে অনেকে। এখন অপেক্ষা শুধু পারফরম্যান্সের।

Leave a Comment