তাইজুলের পাঁচ উইকেটের দিনে চাপের মুখে বাংলাদেশ, ব্যক্তিগত কীর্তি ছাপিয়ে উঠে এলো দলের দুরবস্থা
কলম্বোতে আজ তাইজুল ইসলামের স্পিন ভেলকিতে কাবু লঙ্কানরা। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৭তম বার পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি ছুঁয়ে ফেললেন সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত রেকর্ডের একধাপ নিচে—আর মাত্র দুটো পাঁচ উইকেট দূরে! দেশের বাইরে এটি তাইজুলের পঞ্চমবার, আর শ্রীলঙ্কার মাটিতে দ্বিতীয়। অথচ ম্যাচ শেষে তাঁর মুখে ছিল না বিজয়ের হাসি, ছিল শুধুই হতাশার ছাপ।
সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে এলেন তিনিই—তাইজুল ইসলাম। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের প্রথম ধাক্কা গেল তাঁর দুর্দান্ত বোলিংয়ে। কিন্তু অল্প সময়েই আলোচনার মোড় ঘুরে গেল বাংলাদেশ দলের বাজে পারফরম্যান্সের দিকে। কারণ, আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বেরিয়ে যাচ্ছে টাইগারদের হাতছাড়া হয়ে।
তাইজুল স্পষ্ট করে বললেন, “দল খারাপ করলে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে কী হবে? ব্যাটিং উইকেট ছিল, কিন্তু আমরা সেট হয়ে কেউ লম্বা ইনিংস খেলতে পারিনি। একটা সেঞ্চুরি বা অন্তত দুটি ফিফটি হলেও আজ গল্পটা ভিন্ন হতো।”
এদিন সবচেয়ে মূল্যবান শিকার ছিল পাতুম নিশাঙ্কা। ১৪৬ রান করে ডাবল সেঞ্চুরির পথে থাকা এই লঙ্কান ব্যাটারকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনায় আলো ছড়ান তাইজুল। নিজেই বললেন, “নিশাঙ্কা খুব ভালো খেলছিল। ওর উইকেটটা ম্যাচের মোড় ঘোরানোর মতো ছিল।”
এখন তাইজুলের পাঁচ উইকেট সংখ্যা ১৭, সাকিবের ১৯। খুব কাছাকাছি দুই স্পিনার। তাইজুল বলেন, “সাকিব ভাই আমাদের গর্ব। তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারলে সেটা হবে সম্মানের। নিজের উন্নতির একটা মাইলফলকও।”
তবে শুধু রেকর্ড নয়, তাইজুলের চোখে আরও বড় কিছু। দেশের ক্রিকেটের উন্নতির কথা বলতে গিয়ে সরাসরি তুলে ধরলেন অবকাঠামোর ঘাটতির বিষয়। “শুধু খেলোয়াড়দের দোষ দিয়ে লাভ নেই,” বললেন অভিজ্ঞ এই স্পিনার। “আমাদের সুযোগ–সুবিধা কম, প্র্যাকটিস উইকেটের মান খারাপ। উন্নত কাঠামো পেলে আমরাও নিয়মিত ভালো করতে পারব।”
বাংলাদেশ যখন টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে, তখন এমন আত্মসমালোচনাই সামনে আনছে বাস্তব চিত্র। তাইজুল মনে করেন, “যদি পরিকাঠামো ঠিক থাকত, তাহলে আজ টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের অবস্থান পাঁচ কিংবা ছয় নম্বরে হতে পারত।”
শেষ কথা? “শ্রীলঙ্কার মতো সুযোগ চাই,” বলে শেষ করেছেন তাইজুল। কারণ, মাঠে লড়াই করতে গেলে পেছনের প্রস্তুতিটাই দেয় সবচেয়ে বড় শক্তি।