আল্লাহ বিশেষভাবে কবুল করেন ৬ ধরনের মানুষের দোয়া

দোয়া—এটি শুধুই একটি প্রার্থনা নয়, এটি আল্লাহর সঙ্গে একান্ত এক আত্মিক সংযোগ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দোয়াকে ইবাদতের প্রাণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, আল্লাহর কাছে করা কোনো দোয়া কখনোই অপচয় হয় না। কখনো দোয়াটি সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয়, কখনো তা কোনো অনাগত বিপদ থেকে রক্ষা করে, আবার কখনো তার প্রতিদান রাখা হয় আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য। তবে হাদিসে এমন কিছু মানুষের দোয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, যাঁদের দোয়া আল্লাহ বিশেষভাবে কবুল করেন—এমনকি তা প্রত্যাখ্যান করার প্রশ্নই আসে না।

রোগে আক্রান্ত একজন মানুষের দোয়া আল্লাহর দরবারে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, এই দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতোই পবিত্র। তাই কারও অসুস্থতার সময় শুধু তাকে দেখে আসা নয়, তার কাছে দোয়া চাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।

একইভাবে, রোজাদার ব্যক্তি বিশেষত ইফতারের মুহূর্তে যখন দোয়া করে, তখন তা আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। এটি একটি বরকতপূর্ণ সময়, যা অনেক আলেম ‘সোনালি মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই সময়ে হৃদয়ের গভীর থেকে করা দোয়া আসমানের দরজায় সোজা পৌঁছে যায়।

পিতা যখন সন্তানের জন্য দোয়া করেন, সেটি অতি শক্তিশালী ও কবুলযোগ্য এক প্রার্থনা। মা সাধারণত সন্তানের জন্য সব সময় দোয়া করেন, কিন্তু বাবার হৃদয় থেকে নিঃসৃত দোয়া এক অন্যরকম আবেদন রাখে। মহানবী (সা.) বলেছেন, পিতার দোয়া সন্তানের জন্য নির্ভুলভাবে কবুল হয়। এটি যেন সন্তানের ভবিষ্যতের পথে এক আলোকবর্তিকা।

এ ছাড়াও, কেউ যদি কারো অনুপস্থিতিতে তার কল্যাণ কামনায় দোয়া করে, তবে তা যেন আসমান ছুঁয়ে যায়। ফেরেশতারা তখন ‘আমিন’ বলে, এবং দোয়া-কারীর জন্যও সেই একই কল্যাণ প্রার্থনা করে। এটি ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত।

জুলুমের শিকার মানুষের দোয়া আল্লাহর দরবারে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। মজলুম যখন চোখের পানিতে ডুবে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে, তখন সেই দোয়ার সামনে কোনো পর্দা থাকে না। হাদিসে বারবার এই দোয়ার গুরুত্ব ও ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মুসাফির, অর্থাৎ ভ্রমণরত অবস্থায় দোয়া করা ব্যক্তির প্রার্থনাও আল্লাহ কবুল করে থাকেন। কারণ ভ্রমণকালীন মানুষ একধরনের নির্ভরতা ও একাকিত্বে থাকে, যার ফলে দোয়াতে থাকে হৃদয়ের গভীরতা ও খাঁটি আত্মসমর্পণ।

বিশেষ কিছু সময়ও আছে, যখন দোয়া আরও বেশি কবুল হয় বলে হাদিসে এসেছে। যেমন গভীর রাত, যখন চারপাশ নিস্তব্ধ ও মন থাকে একান্ত—এই সময়ে আল্লাহ নিজেই তাঁর বান্দাকে ডাকেন। আজানের পর, জমজমের পানি পান করার মুহূর্তে এবং জুমার দিনে, বিশেষ করে আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ে দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

অনেকের ধারণা, দোয়ার জন্য অজু করা বাধ্যতামূলক। অথচ হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, দোয়ার আসল শর্ত হলো হৃদয়ের পবিত্রতা, বিনয় ও আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস। অজু একটি ভালো আমল বটে, তবে তা না থাকলেও আন্তরিক ও খাঁটি দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হতে পারে।

ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, দোয়া শুধু চাওয়া নয়—এটি একটি ইবাদত, একপ্রকার আত্মসমর্পণ। তাই প্রতিটি বিশ্বাসী হৃদয়ের কর্তব্য হলো, দোয়া করার সময় সঠিক নিয়ত, পরিচ্ছন্ন অন্তর এবং দৃঢ় ঈমান নিয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা। কারণ, আল্লাহ কখনোই খাঁটি দোয়াকে ফিরিয়ে দেন না।

Leave a Comment