ব্যবসা নয়, রাজনীতি থেকে ব্যবসা আলাদা করাই বিএনপির লক্ষ্য

আমীর খসরু: “ব্যবসা রাজনীতির হাতিয়ার নয়, ফ্যাসিস্টদের প্রভাব মুক্ত করতেই হবে”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক খাতে একচেটিয়াভাবে কর্তৃত্ব কায়েম এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অর্থনীতিকে ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ব্যবসাকে রাজনীতির হাতিয়ার বানানো চলবে না—এটা বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান, কেবল মতামত নয়।

শনিবার (২৮ জুন) সিলেট নগরীর মেন্দিবাগে জালালাবাদ গ্যাস অডিটরিয়ামে ‘সিলেট বিজনেস ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন তিনি। সিলেট বিভাগের চার জেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ক্ষমতাসীনদের ‘মনোপলি নিয়ন্ত্রণে’ অভিযোগ

আমীর খসরু অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার ব্যবসা ও অর্থনীতিকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে এনে দেশজুড়ে একধরনের করপোরেট একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী ব্যবসার সব খাত দখল করে নিয়েছে। নীতিমালা ও আইনি কাঠামোকে পাশ কাটিয়ে তারা মনোপলি বানিজ্য গড়ে তুলেছে, যা দেশের প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে।

তিনি বলেন, “শুধু ব্যবসা নয়, পুরো অর্থনীতিই এখন রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের আওতায়। এটা ফ্যাসিস্ট শাসনের বৈশিষ্ট্য। এর অবসান না হলে ভবিষ্যৎ অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।”

বিএনপির প্রতিশ্রুতি: ব্যবসায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে একটি ব্যবসাবান্ধব, উন্মুক্ত ও নীতিনিষ্ঠ অর্থনীতি গড়ে তুলবে বলে জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয় হবে সেবার স্থান, নিয়ন্ত্রণের নয়। ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালা গড়া হবে—এটাই বিএনপির নীতি।”

তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত ধ্বংস, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতা ব্যবসাকে প্রায় অচল করে তুলেছে। এই অচলাবস্থার জন্য সরকারের ‘কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ’ দায়ী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অর্থনীতির করুণ চিত্র তুলে ধরেন বিএনপি নেতা

২০০৭ সালের বিএনপি সরকারের সময়ের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, “তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। আজ সেখান থেকে অনেক পিছিয়ে গেছি। যদি সেই ধারাবাহিকতা থাকত, প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছুঁতো।”

আমীর খসরু বলেন, দেশের সৃজনশীলতা ও উৎপাদনশীলতা নষ্ট করে একটি অবরুদ্ধ অর্থনীতি তৈরি করা হয়েছে, যা জনগণের কর্মসংস্থান, রপ্তানি ও বাজারব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করেছে।

ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৮ মাসে ১ কোটি চাকরির পরিকল্পনা

বিএনপির নির্ধারিত কর্মসূচির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে দলটি প্রথম ১০০ দিন ও ১৮০ দিনের জন্য নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। এতে ১৮ মাসে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। খাতভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই কর্মসংস্থানের রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ করে বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। এসব পদক্ষেপ তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি নতুন অর্থনৈতিক রূপকল্প বাস্তবায়নের অংশ বলে জানান তিনি।

রাজনৈতিক বার্তা: অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি

সভায় বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে প্রতিধ্বনিত হয়, বাংলাদেশ এখন আর শুধুমাত্র রাজনৈতিক সংকটে নেই, বরং একটি অর্থনৈতিক সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত বিএনপি।

সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিজেএমইর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা বক্তব্য দেন।

বক্তব্যের শেষে আমীর খসরু অংশগ্রহণকারীদের মতামত শুনে সমাপনী বক্তব্য দেন এবং ব্যবসায়ী সমাজকে ‘পরিবর্তনের সহযাত্রী’ হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Leave a Comment