ইরানে গণজানাজা, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০০-এর বেশি

শনিবার সকালে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় এক ব্যতিক্রমধর্মী গণজানাজা ও শোক মিছিল। ইরানের তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে সকাল থেকেই জড়ো হন হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ। কালো পোশাক পরা মানুষের হাতে ছিল ফুল, তসবি, নেতাদের ছবি ও নানা প্রতিবাদী বার্তা লেখা প্ল্যাকার্ড। সবার চোখেমুখে ছিল বেদনার ছাপ, অনেকেই চিৎকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন।

জানাজায় যাঁদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সাংবাদিক, নারী ও শিশু সহ সাধারণ বেসামরিক মানুষ। নিহতদের কফিন ইরানের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ছিল এবং সেগুলো বিশাল ট্রাকে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজাদি স্কয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে হাজারো মানুষ কফিনবাহী ট্রাকের পেছনে হেঁটে শহীদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

এই কর্মসূচিতে অংশ নেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও, যা গোটা জাতির একাত্মতার বার্তা দেয়। ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরে একাধিক সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়। তেহরানের ভাষ্যমতে, কয়েক দিনব্যাপী এই বিমান হামলায় প্রাণ হারান ৬০০-এরও বেশি মানুষ, যাঁদের মধ্যে আছেন সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ সদস্য, বিজ্ঞানী এবং সাধারণ নাগরিক।

ইরান এই হামলার জবাবে পাল্টা সামরিক অভিযানে অংশ নেয় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায়। এই পাল্টাপাল্টি হামলা দুই দেশের মধ্যে টানা ১২ দিন ধরে চলতে থাকে, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার ঝাঁঝ বাড়িয়ে তোলে। সংঘাতে একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি অংশ নেয়, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। তবে ২৪ জুন উভয় দেশ একটি যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয়।

তেহরানে আয়োজিত এই গণজানাজা কেবল নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আনুষ্ঠানিকতা ছিল না; এটি ছিল এক ধরনের জাতীয় শোক ও প্রতিরোধের বার্তা, যেখানে শোক প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে উঠে এসেছে একটি গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা—সার্বভৌমত্ব ও আত্মরক্ষার প্রশ্নে ইরান জনগণ এককাট্টা।

সূত্র: Reuters

Leave a Comment