বিএটিবিসির ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে কারখানা সাভারে

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি) প্রায় ছয় দশক পর ঢাকার মহাখালী থেকে তাদের সিগারেট উৎপাদন কারখানা সরিয়ে নিচ্ছে সাভারের আশুলিয়ায়। এ উপলক্ষে কোম্পানিটি প্রায় ৩০০ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে, যা মূলত কারখানাটির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। আগামী ১ জুলাই থেকে আশুলিয়ার এই কারখানাই বিএটিবিসির প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

এখন পর্যন্ত আশুলিয়ার কারখানায় সীমিত পরিসরে শুধু রপ্তানির জন্য সিগারেট তৈরি হতো। তবে এখন থেকে দেশীয় বাজারসহ রপ্তানি কার্যক্রমের প্রায় সব উৎপাদনই সেখানেই কেন্দ্রীভূত হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পাঠানো এক ঘোষণা অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২৯৭ কোটি টাকার এই বিনিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে। অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হবে কোম্পানির নিজস্ব তহবিল এবং ব্যাংক ঋণ।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে মহাখালীতে স্থাপিত কারখানাটি ছিল বিএটিবিসির দ্বিতীয় উৎপাদন কেন্দ্র। প্রথম কারখানা চালু হয়েছিল ১৯৪৯ সালে, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে। মহাখালী কারখানাটি ইজারাকৃত জমিতে পরিচালিত হতো, যেখানে সর্বোচ্চ ৯০ বছর পর্যন্ত ইজারা নবায়নের সুযোগ থাকলেও পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিতর্ক এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তা সম্ভব হয়নি। গত ২৮ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বিএটিবিসির করা আবেদন খারিজ করে দিলে কোম্পানি কারখানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়।

এই সিদ্ধান্তের আওতায় শুধু উৎপাদন ইউনিট নয়, কোম্পানির নিবন্ধিত প্রধান কার্যালয়ও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে সাভারের ধামসোনা, বলিভদ্র বাজার এলাকায়। ১ জুলাই থেকে নতুন এই ঠিকানায় বিএটিবিসির সব কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এবং বন্ধ হয়ে যাবে মহাখালীর পুরোনো কারখানার কার্যক্রম।

শেয়ারবাজারে বিএটিবিসি’র চলমান কার্যক্রম বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারদর ২৮০ টাকায় পৌঁছায়, যা আগের দিনের তুলনায় ৭ টাকা ৭০ পয়সা বা প্রায় ৩ শতাংশ বেশি। লেনদেনের দিক থেকেও কোম্পানিটি ছিল ডিএসইর শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায়, যেখানে প্রায় সোয়া ৮ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

২০২৪ অর্থবছরের জন্য বিএটিবিসি বিনিয়োগকারীদের প্রতি শেয়ারে ৩০ টাকা হারে, অর্থাৎ ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেই (জানুয়ারি–মার্চ) কোম্পানিটি ৩১৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে এবং বিক্রি করেছে প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পণ্য। ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটির বার্ষিক মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আশুলিয়ায় স্থানান্তরের মাধ্যমে বিএটিবিসি আরও প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ ও উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। একইসঙ্গে স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা আরও জোরালো করতে সক্ষম হবে কোম্পানিটি। বাজারে স্থিতিশীল লভ্যাংশ ও ধারাবাহিক মুনাফা দেওয়া এই কোম্পানিটি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ ও লাভজনক অপশন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

Leave a Comment