সাগর উত্তাল, ৫ হাজার ট্রলার বন্ধ, কক্সবাজারে জেলেরা বিপাকে

সাগর উত্তাল, সাগরে নামতে পারছে না ৫ হাজার ট্রলার – কক্সবাজারের জেলেরা বিপাকে

কক্সবাজার, ১৯ জুন – পুরোপুরি শুরু হয়ে যাওয়া বর্ষা মৌসুমে বঙ্গোপসাগর এখন প্রচণ্ড উত্তাল। এর ফলে কক্সবাজারের অন্তত ৫ হাজার বড় ট্রলার সাগরে যেতে পারছে না। জেলেরা মাছ ধরার সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরতে প্রস্তুত হলেও বৈরী আবহাওয়ায় তারা পড়েছেন চরম দুর্দশায়।

আজ মঙ্গলবার (১৯ জুন) ভোর থেকে কক্সবাজারে টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সক্রিয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মাত্র ১২ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। সাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি, ফলে মাঝারি ও বড় ট্রলারগুলো সাগরের গভীরে যেতে পারছে না।

লাভের খাতা খুলতে পারছেন না জেলেরা

গত ১২ জুন ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও এখনো সাগরে নামতে পারছে না অধিকাংশ ট্রলার। কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “সাগর উত্তাল থাকায় প্রায় লাখখানেক জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শুধু ছোট আকারের কিছু ট্রলারই উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় মাছ ধরতে পারছে।”

এখন যারা মাছ ধরছেন, তারা ১০-১২ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্তই যেতে পারছেন। তবে এতে ইলিশের দেখা মিলছে খুবই কম। লইট্যা, গুইজ্যা, মাইট্যা, কামিলা, পোপার মতো ছোট মাছ কিছুটা ধরা পড়লেও গভীর সাগরের ইলিশ ধরতে না পারায় জেলেরা বড় লোকসানের মুখে।

কিছু ট্রলারে অল্প ইলিশ, তবুও খরচ উঠছে না

আজ সকালে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, মাত্র কিছু ট্রলার ঘাটে ফিরেছে। এদের কেউ কেউ ২০-৫০টি ইলিশ পেয়েছেন।
এফবি জনি ট্রলারের মালিক জানান, জালে ২১টি ইলিশ ধরা পড়লেও তা বিক্রি না করে নিজেদের খাওয়ার জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। অন্য মাছ মিলিয়ে তাঁরা প্রায় দেড় লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন।

এফবি রাজিয়া নামের একটি ট্রলারের জেলে আবুল কাশেম জানান, “আমরা ২১ জন মিলে ট্রলার চালাতে খরচ করেছি সাড়ে ৩ লাখ টাকা। মাছ বিক্রি করে আয় হয়েছে ২ লাখ টাকার মতো। খরচই উঠছে না, উল্টো ঝুঁকি নিয়েও দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়।”

উপকূলজুড়ে জেলে পল্লিতে খাদ্যসংকট

ইলিশ না পাওয়ায় কক্সবাজার পৌরসভা, খুরুশকুল, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৩২টি জেলে পল্লিতে চলছে চরম খাদ্যসংকট। সংসার চালানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব জেলের জন্য।

ঢাকায় গেল ১০০ মণ ইলিশ, দামও চড়া

বাঁকখালী ফিশারিঘাট থেকে প্রতিদিনই কিছু ইলিশ ও সামুদ্রিক মাছ ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন বলেন, “সাগর উত্তাল থাকলেও কাছাকাছি এলাকায় যেসব ট্রলার যাচ্ছে, তাদের জালে ৪০-৭০টি করে ইলিশ উঠছে। ফলে ইলিশের দাম প্রতি কেজি ১,০০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।”

আজ ঢাকায় ১০০ মণ ইলিশসহ ৪০০ মণ সামুদ্রিক মাছ পাঠানো হয়েছে। এর আগে গতকালও ৮০ মণ ইলিশ পাঠানো হয়েছিল।

এবার ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্য ৩৬ হাজার মেট্রিক টন

কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, গত বছর জেলায় মাছ উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ইলিশ ছিল ৩৫,৮০০ মেট্রিক টন। চলতি বছর ৩৬,০০০ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইলিশ কবে মিলবে?

জেলেরা জানান, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে সাগর প্রায়ই উত্তাল থাকে। তাই বর্ষাকালকে তারা ‘প্রাকৃতিক বন্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করেন। সব ঠিক থাকলে আগামী ২০ জুলাইয়ের পর সাগর শান্ত হলে ইলিশ ধরা পুরোদমে শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।

Leave a Comment