ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বিভক্ত ইউরোপ, শান্তি আলোচনায় অনিশ্চয়তা

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ইউরোপীয় দেশগুলোর বিভক্তি, শান্তি প্রচেষ্টার দুর্বলতা

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে, ইউরোপীয় তিন দেশ—জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য—ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসেও তেমন কোনো ফল আনতে পারেনি। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আয়োজিত এই আলোচনায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে এসব দেশের কূটনীতিকেরা অংশ নেন। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায়, এ সংঘাত আরও জটিল আকার নিতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আলোচনার বিষয়ে ইরান সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, তারা শুধুই শুনতে এসেছে, আলোচনা করতে নয়। ইরানের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলাপই সম্ভব নয় যতক্ষণ না ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হচ্ছে। কারণ, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাল্টা হামলার পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইউরোপের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ এবং ইরান শুধু আমেরিকার সঙ্গেই কথা বলতে চায়। ট্রাম্প আরও জানান, ইরানকে আক্রমণ করবেন কি না—সে বিষয়ে তিনি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ইউরোপীয় দেশগুলোর অবস্থান: বিভক্ত দৃশ্যপট

গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। জার্মানি এখনো ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে অবস্থান করছে, এবং তারা জাতিসংঘের শরনার্থী সহায়তা সংস্থা UNWRA-এর সহায়তা বন্ধ করতে অস্বীকার করেছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য কিছুটা অবস্থান পরিবর্তন করেছে। তারা ইসরায়েলের দুই শীর্ষ ডানপন্থী নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফ্রান্সও তুলনামূলকভাবে বেশি সমালোচনামুখর। তারা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে।

E3-এর (জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য) ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতা

এই তিন দেশ একসাথে JCPOA নামক চুক্তিতে ইরানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর থেকে চুক্তিটি কার্যত ভেঙে পড়ে। ইরানও এক বছর পর একই পথে হেঁটে চুক্তি বাতিল করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে E3-এর নিজস্ব কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয় ছাড়া তারা বড় ধরনের কূটনৈতিক সমাধান আনতে পারবে না। মার্কিন প্রশাসনের মধ্যেই এখন ইরান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। ট্রাম্পের মতে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে রয়েছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ তা অস্বীকার করেছে।

জাতিসংঘ ও বৃহৎ শক্তিগুলোর ভূমিকা

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও এ বিষয়ে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র একমত নয়। চীন ও রাশিয়া, উভয়ই ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে জড়িত, কিন্তু যুদ্ধ ঠেকানোর মতো সামরিক কিংবা কূটনৈতিক ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। ফলে তারা চুপ থাকতেই বেশি আগ্রহী।

শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ না শান্তি?

পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো পক্ষকে বুঝতে হবে যে সামরিকভাবে এ সমস্যার সমাধান নেই। চূড়ান্ত শান্তির জন্য কূটনৈতিক চেষ্টাই একমাত্র পথ, কিন্তু তাতে সফলতা আসবে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।

বর্তমানে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রচেষ্টা যতই আন্তরিক হোক না কেন, তারা বাস্তবিক কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। সব দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে—তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার ওপরই নির্ভর করছে এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ।

সূত্র: Aljazeera

Leave a Comment