যুদ্ধবিরতিতে ইরান-ইসরায়েল, সবাই দাবি করছে বিজয়

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পর আপাত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র—তবে সবাই নিজেকে দেখাচ্ছে বিজয়ী হিসেবে। সম্প্রতি ইরানে ইসরায়েলের হামলা, এর পাল্টা জবাব, যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ এবং কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের পাল্টা হামলার পর পরিস্থিতি চরমে পৌঁছায়। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক তৎপরতায় সংঘাত সাময়িকভাবে থেমেছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত প্রতিটি পক্ষই এটিকে নিজেদের কৌশলগত সফলতা হিসেবে প্রচার করছে।

ইসরায়েল তাদের অভিযানকে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে অভিহিত করে বলছে, তারা ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীকে লক্ষ্য করে সফল হামলা চালিয়েছে। দেশটির দাবি, এই হামলায় ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, যা তাদের সামরিক সক্ষমতাকে অনেকটাই দুর্বল করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ইসরায়েল এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তা পেয়েছে, এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও এই অভিযানে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে—যা কূটনৈতিকভাবে এক নজিরবিহীন ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই অভিযানের মাধ্যমে তারা নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে এই সামরিক পদক্ষেপ দেশটির নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক মিত্রদের কাছে শক্ত বার্তা দিয়েছে।

অন্যদিকে, ইরান এই সংঘাতের মধ্যেও নিজেদের জবাবদিহি সক্ষমতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। দেশটির সামরিক বাহিনী কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালিয়ে আঘাত হানে। যদিও ইরান ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ, তারপরও তারা এই প্রতিরোধকে একটি “জাতীয় প্রতিরক্ষা সাফল্য” হিসেবে তুলে ধরছে।

এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের জন্য কিছুটা কৌশলগত বিরতি তৈরি করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া দেশটির অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়ছিল, তাই এই বিরতিকে ইসরায়েল সম্ভাব্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সুযোগ হিসেবে দেখছে। তবে দেশটিতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট নয় এবং পুনরায় সংঘাত শুরুর ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে।

ইরানের জন্য যুদ্ধবিরতি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ টানা হামলায় দেশটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন কঠিন হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এই পরিস্থিতিকে কিছুটা “মানসিক বিজয়” হিসেবে তুলে ধরলেও, বাস্তবতা হচ্ছে দেশটিকে দীর্ঘ মেয়াদে বড় রকমের পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

তবে সব পক্ষ নিজেদের বিজয়ী দাবি করলেও, এই ‘বিজয়’ কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরপরই ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, ইরান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। দেশটির দুই শীর্ষ মন্ত্রী আবারও নতুন করে হামলার হুমকি দিয়েছেন। ফলে এই যুদ্ধবিরতি আদৌ দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।

বিশ্বজনীন নিরাপত্তা ও মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এখন এক নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে। আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন এই যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যতের দিকে।

সূত্র: BBC

Leave a Comment