ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা: সিআইএ দাবি করছে কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে কর্মসূচি, পেন্টাগন ও ট্রাম্পের ভিন্ন মূল্যায়ন
তেহরান | জুন ২০২6:
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক একটি বিমান হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ। তাঁর মতে, এ হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি “অন্তত কয়েক বছর” পিছিয়ে পড়েছে। তবে এই মূল্যায়ন নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের ভেতরেই তৈরি হয়েছে মতবিরোধ।
সিআইএ ও জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের দাবী
র্যাটক্লিফ জানান, মার্কিন বিমান বাহিনী পরিচালিত এই হামলায় নাতানজ, ফোর্ডো ও ইসফাহানের মতো উচ্চ-গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই কেন্দ্রগুলো পুনরায় সচল করতে “বহু বছর” সময় লাগবে। জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডও এই মূল্যায়নের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন।
পেন্টাগনের ভিন্ন মূল্যায়ন
তবে পেন্টাগনের একটি ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের মূল পারমাণবিক কর্মক্ষমতা আংশিকভাবে অক্ষত রয়েছে এবং হামলার ফলে কর্মসূচি কেবল “কয়েক মাসের জন্য” বিলম্বিত হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, এটি একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে এতে পরিবর্তন আসতে পারে।
ট্রাম্পের মন্তব্য ও বিতর্ক
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার বিষয়ে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বার্তায় দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা “সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস” হয়েছে। তিনি মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে অভিযুক্ত করেন “ভুয়া তথ্য” ছড়ানোর জন্য এবং জানান, অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরতে শিগগিরই প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা একটি প্রেস কনফারেন্স করবেন।
হামলার বিস্তার ও স্যাটেলাইট চিত্র
প্রায় ১২৫টি বিমান একযোগে ইরানের তিনটি মূল পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে অভিযান চালায়। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফোর্ডোর দুটি প্রবেশপথের কাছে ছয়টি বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে এবং ইসফাহানেও অনুরূপ ক্ষয়ক্ষতি চিহ্নিত হয়েছে। যদিও ভূগর্ভস্থ যন্ত্রপাতিগুলোর সম্পূর্ণ অবস্থা এখনও স্পষ্ট নয়।
আইএইএ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করেছেন, ইরান হয়তো হামলার পর উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি বড় অংশ অন্যত্র স্থানান্তর করেছে। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আংশিক ক্ষতির কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
ইসরায়েল ও ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের পারমাণবিক শক্তি কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোর্ডোর হামলা “অপরিবর্তনীয় ক্ষতি” সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সময়সীমা কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে। তবে ইরানি পার্লামেন্ট উপদেষ্টা মেহেদী মোহাম্মদী এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ফোর্ডোতে কোনো স্থায়ী ক্ষতি হয়নি।
মধ্যস্থতা, আলোচনার সম্ভাবনা ও উত্তেজনার ভবিষ্যৎ
হামলার সময়কালেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছিল, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতা সক্রিয় ছিল। ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে নেদারল্যান্ডসে অবস্থানকালীন ট্রাম্প জানান, “এই হামলা ছিল তীব্র ও ধ্বংসাত্মক” এবং ভবিষ্যৎ আলোচনায় তিনি ইরানকে পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগে চাপ দেবেন।
তেহরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পূর্ববর্তী মূল্যায়নও তা সম্পূর্ণভাবে খণ্ডন করেনি। তবে সাম্প্রতিক এই সামরিক অভিযানের পর আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে পারমাণবিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সূত্র: BBC