নতুন বাংলাদেশ দিবস হিসেবে ৮ আগস্ট ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর শীর্ষ তিন নেতা—সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আখতার হোসেন—সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশের ‘নতুন যাত্রা’ শুরু হয়েছিল ৫ আগস্ট, যেদিন শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগস্ট নয়।
সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’, ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস’ এবং ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এনসিপি নেতারা দাবি করছেন, ৫ আগস্টই প্রকৃত নতুন বাংলাদেশের সূচনা এবং জনগণের বিজয়ের দিন, যা সরকার বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে।
২৬ জুন বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “৫ আগস্ট ছিল সাধারণ ছাত্র–জনতার ঐতিহাসিক বিজয়ের দিন। এই দিনকে অগ্রাহ্য করে ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করার অর্থ হলো আন্দোলনকে কুক্ষিগত করা ও জনগণের অর্জনকে সরকারিভাবে নিজের করে নেওয়া।”
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “সত্যিকার অর্থে নতুন বাংলাদেশ দিবস পালিত হবে সেদিন, যেদিন জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হবে এবং মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জুলাই সনদ কার্যকর হবে। ৮ আগস্টকে কেন্দ্র করে উৎসব আয়োজন, মূল সত্তাকে আড়াল করার শামিল।”
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করেন, “৮ আগস্ট কোনো দ্বিতীয় স্বাধীনতার সূচনা নয়, বরং বিপ্লবকে থামিয়ে দেওয়ার দিন। ৫ আগস্টই হচ্ছে আসল ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’ এবং ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস’।”
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই ধারাবাহিকতায় ২৫ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি পরিপত্র জারি করে তিনটি দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার নির্দেশ দেয়।
এদিকে, ১৬ জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ হিসেবে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তাকে স্মরণে ওই দিনকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারের ঘোষণাকে বিরোধী রাজনৈতিক মহল দেখছে একটি রাজনৈতিক কৌশল ও ইতিহাস পুনর্লিখনের চেষ্টা হিসেবে। এনসিপি নেতাদের মতে, জনগণের বিজয়কে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত দিয়ে ঢেকে ফেলা দেশের রাজনীতিকে আরও দ্বিধাবিভক্ত করছে। এতে ভবিষ্যতের আন্দোলন ও জাতীয় ঐক্যের পথ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
এই বিতর্ক এখন নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে দিবসের স্বীকৃতি কেবল স্মৃতির নয়, বরং রাজনৈতিক অবস্থান ও আদর্শের প্রতিফলন হয়ে উঠছে।