নতুন তিন দিবস ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্ক ও সরকারের পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত
ঢাকা, ২৭ জুন — অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত নতুন তিনটি দিবস নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’, ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ এবং ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করার পর থেকেই সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতবিরোধ প্রকট হয়ে উঠছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রতিবছর এই দিবসগুলো যথাযথ মর্যাদায় পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘোষণার পরপরই বিশেষ করে ৮ আগস্টের ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র শীর্ষ নেতারা এই ঘোষণার সমালোচনায় মুখর হন। তাঁদের মতে, ‘নতুন বাংলাদেশের’ প্রকৃত সূচনা ৮ আগস্ট নয়, বরং ৫ আগস্ট। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পষ্ট করে লেখেন, “৫ আগস্টের ঐতিহাসিক অর্জনকে ৮ আগস্টে স্থানান্তরের চেষ্টা রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।” একই সুরে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলমও মন্তব্য করেন, “৮ আগস্ট কোনো ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র সূচনা নয় বরং এ দিনটি ছিল বিপ্লব থেকে সরে আসার সূচনা।”
দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন আরও বলেন, “নতুন বাংলাদেশ দিবস” তখনই অর্থবহ হবে, যেদিন “জুলাই ঘোষণাপত্র” প্রকাশিত হবে এবং “জুলাই সনদ” কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন পাবে। তিনি এই দিবসকে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে রাজনৈতিক-দার্শনিক ভিত্তিতে দাঁড় করানোর ওপর জোর দেন।
প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনটি দিবস নিয়েই সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে এবং প্রয়োজনে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হতে পারে। তিনি বলেন, “সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই তিন দিবস ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকার একদিকে ঐতিহাসিক ঘটনাবলিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইলেও অন্যদিকে তা একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে সরকারের অবস্থান পরিস্কার না হলে এই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।